প্রাথমিক চিকিৎসা কি – what is first aid treatment

প্রাথমিক চিকিৎসা হচ্ছে ,ডাক্তারি চিকিৎসার আগে রোগী বা আহত ব্যক্তির অবস্থা যাতে বেশি খারাপ না হয়। রোগী বা আহত ব্যক্তিকে ঘটনা স্থলে। যে তাৎক্ষণিক  ভাবে যে চিকিৎসা প্রদান করা হয়। তাকেই প্রাথমিক চিকিৎসা বলা হয়। 
 

কেন প্রাথমিক চিকিৎসা করা হয়…

রোগী বা আহতদের  যথা সম্ভব জীবন  বাঁচানোর চেষ্টা করা। রোগী বা  আহত ব্যক্তির  অবস্থার  যেন খারাপ না হয়  তার জন্য। আহতদের  চিকিৎসায় সহযোগীতা করা। যাতে  হাসপাতালে  পৌঁছনোর সাথে সাথে  চিকিৎসা শুরু করতে পারে। 
 
 
যে কোনো কারনেই হোক প্রাথমিক চিকিৎসা কি গুরুত্ব অপরিসীম।
 তাই  প্রতিটি নাগরিকের  প্রাথমিক  চিকিৎসা সমন্ধে জ্ঞান  থাকা আবশ্যক। 
 
 
প্রাথমিক চিকিৎসা  অনেক বড় কাজ বলা যেতে পারে। 
 আপনার সামান্য  চিকিৎসায়  বা  উপকারে যে কোনো ব্যক্তির জীবন বাঁচাতে  পারেন। 
এ জন্য আপনাকে প্রাথমিক চিকিৎসা সমন্ধে জ্ঞান থাকতে হবে। 
 
 
যে কোনো কারণে মানুসের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে –
 
যেমন – প্রাকৃতিক দুর্যোগ ,জলে ডুবা ,রাস্তা ঘাটে দুর্ঘটনা ,ভূমিকম্প  এছাড়াও ইলেক্ট্রিক  জিনিস আমরা অনেক ব্যবহার করে থাকি। ইত্যাদি কারণে  দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। 
 
এসব কারনে জন্য -অল্প কিছু হলেও প্রাথমিক চিকিৎসা  জানা বিশেষ প্রয়োজন। 
 
 

First Aid Kid এবং বক্সে মোটামুটি এ সমস্ত জিনিস রাখতে পারেন। 

প্রাথমিক চিকিৎসা কি  - what is first aid treatment
First Aid
 
আঠালো ব্যান্ডেজ /টেপবিভিন্ন সাইজের ব্যান্ডেজ, প্লাস্টার রোল, বাটারফ্লাই ব্যান্ডেজ, 
 
 
ট্যাবুলার গেজ ব্যান্ডেজ -আঙুলের যখমের জন্য ,
এন্টিসেপটিক  টিস্যু ,
তুলা  ,উল এবং এন্টিসেপ্টিক  টিস্যুর সাথে ব্যবহৃত এন্টিসেপ্টিক  লোশন,
 
 
হ্যান্ড স্যানিটাইজার ,এন্টিবায়োটিক মলম ,হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড ,
জীবাণুমুক্ত ক্রিম এবং লোশন ,ডেটল,স্যাভলন ,পেট্রোলিয়াম জেলি ,
 
 
ব্যাথা নাশক,এন্টিহিস্টামিন – এলার্জি দূরীকারক ,
ফাংগাল মেডিসিন -এন্টিফাংগাল  ক্রিম ,
 
ডিজিটাল থার্মোমিটার  এবং জ্বরের ঔষধ  যেমন -সাধারণ  প্যারাসিটামল ,
 
এছাড়াও যদি  -আমাশয় ,পাতলা পায়খানা ,সর্দিকাশি  ইত্যাদির রোগের ঔষধ রাখতে চান। 
তবে  কোনো ডাক্তারের  পরামর্শ নিয়ে  ঔষধ  রাখতে পারেন। 
 
 

কি সমস্যা হলে কি করা প্রয়োজন – কেটে রক্ত বের  হলে কি করনীয় 

 

পরিষ্কার কাপড় বা ব্যান্ডেজ দিয়ে চাপ দিয়ে ক্ষতস্থানে  চেপে ধরুন। যে অঙ্গ থেকে রক্ত বেড় হচ্ছে ,সম্ভব হলে সে অঙ্গ কিছুক্ষণ উঁচু করে  রাখুন। 

এন্টিসেপটিক লোশন দিয়ে ওই জাগা পরিষ্কার করে -এন্টিবায়োটিক ক্রিম লাগিয়ে ব্যান্ডেজের সাহায্যে বেঁধে দিন। 

যদি  সেলাইয়ের  প্রয়োজন হয় ,ডাক্তারের কাছে তাড়াতাড়ি নেওয়ার ব্যবস্থা করুন। যদি প্রয়োজন হয় টুনিকেত ব্যবহার  করে রক্তপাত  বন্ধ করা যেতে পারে। একটা জিনিস সব সময় মনে রাখতে হবে -যে কোনো  মূল্যে  রক্ত বন্ধ করতে হবে। 

শরীরে কোথাও আঘাত লাগলে বা ফুলে গেলে 

কোনো খেলার সময় বা কোনো কাজ করার  সময় আমাদের আঘাত লাগলে –
হাতে বা পায়ে ফুলে গেলে  সে জাগায় সাথে সাথে বরফের সেঁক দিন। 
 
 
থ্রোম্বোফব জেল হালকা লাগিয়ে দেওয়া যেতে পারে।
যদি কেটে যায় তার ওপর ক্রিম লাগাবেন না। 
 
 
আঘাত লাগা জাগায় ক্রেপ ব্যান্ডেজ দিয়ে ভালো করে মুড়িয়ে রাখুন। 
আঘাত বেশি মনে হলে ,চিকিৎসকের পরামর্শ নিন ও  যথাযত  চিকিৎসা নিন। 
 
 

বিষাক্ত কিছু খেলে 

কেউ বিষাক্ত কিছু খেয়ে ফেললে ,তাকে বমি করানোর  চেষ্টা করুন। 
এ জন্য  বেশি লবন  মেশানো জল  খাওয়াতে পারেন  এবং তাড়াতাড়ি  হাসপাতালে  নেওয়ার ব্যবস্থা করুন। 
 

বিষাক্ত পোকা মাকড়ের কামড় 

পোকার কামড়ের স্থানে  বরফ লাগানো যেতে পারে। প্রয়োজনে পরিষ্কার জল বা সাবান জল দিয়ে ধুয়ে  ফেলতে পারেন। এন্টিসেপটিক  লোশন লাগাতে পারেন। 
 

সাপে  কামড়ালে 

যদি সম্ভব হয় সাপকে  চিনতে পারলে ভালো হয়। সাপটি  বিষাক্ত কি না। 
আমাদের দেশে বেশির ভাগ সাপের বিষ  থাকে না। যদি বিষাক্ত হয় -সে ক্ষেত্রে  দুটি দাঁতের দাগ দেখা যাবে। 
 
 

কি করবেন প্রাথমিক চিকিৎসা কি 

সাপে কামড়ানো জাগার কয়েক ইঞ্চি উপরে ,কাপড় বা রবার দিয়ে ভালো করে বেঁধে দিতে হবে।
যাতে রক্ত চলাচল কমে যায়। ( সাপে কামড়ের স্থানে ,কেটে নিয়ে রক্ত বের ,করা যেতে পারে
কিন্তু না জেনে করা একদম ঠিক নয় )
 
 
সাপের কামড়ানো ব্যক্তিকে ,চলা চল করতে দিবেন না। সাপের কামড়ানো স্থানে পরিষ্কার জল  বা সাবান জল দিয়ে  ধুয়ে ফেলুন। 
 
রোগীকে বসিয়ে রাখুন ,রোগীকে শোয়াবেন না বা ঘুমাতে দিবেন না। 
যত  তাড়াতাড়ি সম্ভব হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যাস্থা করুন। 
 
 

দাহ ও ঝলসানো ক্ষত ( Burns and Scalds)

শুষ্ক তাপে ,বিদ্যুৎ প্রবাহ ,বিকিরণে পুড়ে যাওয়াকে দাহ বলে। 
আদ্র তাপে  যেমন -ফুটন্ত জল  বা অন্য কোনো গরম পদার্থের সংস্পর্শে আসে পুড়ে যাওয়া কে ঝলসানো  বলে। 
 

কি করবেন 

দাহ বা ঝলসানো রোগীর ক্ষত অংশ পরিষ্কার  ঠান্ডা জল দিয়ে এমন ভাবে ধুয়ে ফেলুন। 
যাতে  পতিত ঠান্ডা জল ধীরে ধীরে ক্ষতের উপর দিয়ে গড়িয়ে যায়। 
 
এমন ভাবে যতক্ষণ না , ক্ষত স্থানের – জ্বালা -যন্ত্রণা না কমে  বা গরম ভাব না কমে ততক্ষণ ঠান্ডা জল দিতে হবে। অথবা ক্ষত অংশকে ঠান্ডা জলে ডুবিয়ে রাখতে পারেন। 
 
 
পরিষ্কার জীবাণু মুক্ত ব্যান্ডেজ বা কাপড় দিয়ে ক্ষত স্থান হালকা করে বেঁধে দিতে হবে। 
 
 
যদি আহত ব্যক্তি জ্ঞান হারিয়ে ফেলে ,
তবে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা সহ  শ্বাস -প্রস্বাসের ব্যবস্থা করতে হবে। 
 

করা উচিত নয় – কি কি

যে কোনো লোশন ,মালিশ বা তেল জাতীয় ড্রেসিং ব্যবহার করা যাবে না। রোগীর পোড়া জাগায় হাত লাগানো যাবে না । রোগীকে বেশি  নড়া চড়া  করতে দিবেন না। 
 
 

চোখে কিছু ঢুকলে কি করবেন 

মানুষের চোখ অমূল্য সম্পদ। নানা কারনে  চোখ দুর্ঘটনায় পড়তে পারে। 
চোখে ধুলা বালি ঢুকতে পারে ,কাজের সময় -কিছু ছিটকে চোখে লাগতে পারে। 
 
 
এ রকম কিছু চোখে পড়লে –
কখনই চোখ কচলানো যাবে না ,পারলে সাথে সাথে জলের ঝাপটা দিতে হবে। যদি  জলের ঝাপটায় বস্তুটি  না বেরিয়ে আসে। তাহলে দেরি না করে ডাক্তারের কাছে যান। 
মনে রাখবেন কোনো ক্রমে রোগীর চোখ কচলাতে দিবেন না। 
 
 
 
যদি বাহিরের কোনো কিছু চোখের গোলকে আটকে থাকে। 
তবে তা  পাতলা ভেজা কাপড় বা রুমাল দিয়ে বের করতে পারেন। 

কানে পোকামাকড় ঢুকে গেলে

কানে পোকামাকড় ঢুকে গেলে সরিষার তেল বা অলিভ অয়েল ,
অল্প পরিমানে ঢেলে দিলে পোকা মরে যায় এবং বের হয়ে আসে। 
 
মার্বেল জাতীয় কোনো কিছু ঢুকে গেলে নড়াচড়া না করে। 
তাড়াতাড়ি ডাক্তারের কাছে  বা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করুন। 
 
 

জলে ডুবে গেলে কি কি করবেন  ….

ডুবন্ত কাউকে সাহায্য করতে গেলে সাবধান।
কারণ -ডুবন্ত ব্যক্তি উদ্ধার কারীকে সজোরে জড়িয়ে ধরে ,ফলে বিপত্তি দেখা  দিতে পারে। 
এ জন্য  ডুবন্ত ব্যক্তিকে পিছন থেকে ,হাতসহ  জড়িয়ে ধরে  জল থেকে তুলতে পারেন। 
 

জল থেকে তোলার পর  কি করবেন 

 
জল থেকে তোলার পর উপুড় করে দেখতে হবে ,
শ্বাস প্রশ্বাস আছে কি না ,ডুবন্ত ব্যক্তির নাম বা আওয়াজ দিয়ে দেখতে হবে। 
 
তিনি কোনো সাড়া দেন কিনা  ……..
যদি শ্বাস প্রশ্বাস না থাকে বা শ্বাস নিতে কষ্টকর হয়। 
মুখে বা শ্বাস নালীতে  কোনো কিছু আটকে থাকে  তাহলে পরিষ্কার করে দিতে হবে। 
 
তারপরে ও শ্বাস না নিলে ,মাথা টানটান করে ধরে মুখ হাঁ করতে হবে। 
উদ্ধার কারীর পেট ভরে শ্বাস নিতে হবে। তারপর ডুবন্ত ব্যক্তির মুখের উপর মুখ দিয়ে হাওয়া দিতে হবে। 
 
যদি ডুবন্ত ব্যক্তির পেট ফুলছে ,হলে শ্বাস দেওয়া ঠিক হচ্ছে। 
ডুবন্ত ব্যক্তি  নিজে থেকে যতক্ষণ  শ্বাস  নিতে না পারবে। ততক্ষণ  এ ভাবে শ্বাস দিতে হবে। 
 
 
সাথে পাশে হাত দিয়ে ,দেখতে হবে নাড়ির  স্পন্দন আছে কি না। 
যদি না থাকে ,তাহলে বুকে চাপ দিতে হবে। 
 
বুকের বাঁ পাশে হাত রেখে জোরে জোরে চাপ দিতে হবে। এমন ভাবে চাপ দিতে হবে ,যেন বুক বেশ খানিকটা  ডেবে  যায়। 
 
 
এমন ভাবে চার -পাঁচ বার দেবার পর ,আবার শ্বাস দিতে হবে। 
এভাবে  নাড়ির  গতি যতক্ষণ  স্বাভাবিক না হওয়া ,পর্যন্ত চালাতে হবে। 
 
যদি ছোট বাচ্চাদের  এক -দুই বছরের হয় ,তাহলে শিশুর বুক দুই হাত দিয়ে ধরে ,বুড়ো আঙুল দিয়ে চাপ দিতে হবে। 
 
 
মনে রাখতে হবে  প্রাথমিক চিকিৎসা চলার পাশা পাশি তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। 
 
শিশুদের ক্ষেত্রে  জলে থাকার কারণে শরীরের তাপমাত্রা কমে যায়। 
তাই শরীর গরম রাখার জন্য কাপড় চোপড়  দিয়ে ভালো করে ঢেকে রাখতে হবে। 
 
 
অনেকে জল থেকে তুলে ,শিশুকে উল্টো করে পেটে চাপ দিয়ে ,
জল বার করার চেষ্টা করি -তবে এটা ঠিক না। পরে সমস্যা হতে পারে। 
 
 
তবে যে কোনো ভাবেই হোক  জীবন বাঁচাতে  হবে। 
যদি প্রাথমিক  চিকিৎসায় কোনো জীবন বাঁচে ,তাহলে মনে করতে পারেন। 
আমি একটা ভালো কাজ করতে পেড়েছি।
 
 
 
যদি ভালো লাগে বা উপকৃত বলে মনে হয় অবশ্যই শেয়ার  করুন। 
যতটুকু আমার প্রাথমিক চিকিৎসা কি সমন্ধে জানা ছিলো। ততটুকু  লেখার চেষ্টা করেছি। 
 
 
প্রাথমিক চিকিৎসা কি – what is first aid treatment সমন্ধে, কোনো ভুল ও ত্রূটি থাকে ,অবশ্যই  কমেন্ট করে জানাবেন। আরও এ রকম নতুন নতুন আপডেট পেতে আমার বাংলার সাথে থাকুন। 
 
 
 
 
ধন্যবাদ 🙏🙏🙏💛

ভালো লাগলে আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করতে পারেন !

7 thoughts on “প্রাথমিক চিকিৎসা কি – what is first aid treatment”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top